দেশ-বিদেশ

ইন্দিরা গাঁন্ধী শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন মনমোহন সিং

নরসুন্দা ডটকম   নভেম্বর ১৯, ২০১৭

ইন্দিরা গাঁন্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১৭  পেতে চলেছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ

ইন্দিরা গাঁন্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তরফে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃ্ত্বে এক আন্তর্জাতিক জুরি মনমোহন সিংহকে সর্বসম্মতভাবে এবছরের পুরস্কার-প্রাপক হিসেবে নির্বাচিত করে।

সেখানে বলা হয়েছে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতকে নেতৃত্বদান দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়ন ঘটানো, বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্র সহ বিশ্বের প্রথমসারির দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সর্বোপরি  জাতি-ধর্ম নির্বিশষে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্য চলতি বছরের ইন্দিরা গাঁন্ধী শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়ন পুরস্কার মনমোহন সিংহকে দেওয়া হচ্ছে।

ট্রাস্টের সচিব সুমন দুবে জানান, মনমোহন সিংহ হলেন তৃতীয় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি দুটি মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। তাঁর জমানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। একইসঙ্গে কোপেনহ্যাগেন জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তিনি যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর এবং দেশের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনও বিভিন্ন সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মনমোহন। যার ফলে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার নতুন উচ্চতায় পৌঁছয়।

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স: ১৯৯৬-২০১২’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ডঃ সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন তাঁকে পাঞ্জাব থেকে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে তিনি সেখান থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীর সাম্মানিক স্নাতক হন। এর পরেই, ১৯৬২ সালে ডঃ সিং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ডি. ফিল পান। তাঁর বই ‘ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট ট্রেন্ডস্ অ্যান্ড প্রসপেক্টক্স ফর সেল্ফ সাসটেন্ড গ্রোথ’ (ক্ল্যারেনডন প্রেস, অক্সফোর্ড থেকে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত) ছিল ভারতের অন্তর্মুখী বাণিজ্য নীতির প্রাথমিক পর্বের এক ধরণের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ।

শিক্ষা জগতে ডঃ সিং – এর পরিচিতি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অধ্যাপনার বছরগুলিতে এবং বিখ্যাত দিল্লি স্কুল অফ ইকোনোমিক্সে তাঁর কাজের সুবাদে এই সময়েই রাষ্ট্রসঙ্ঘের বণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা ‘আংটাড’ – এর সচিবালয়ের কাজে কিছুটা সংক্ষিপ্ত সময় অতিবাহিত করেন। ১৯৮৭ , ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ডঃ সিং এই সংস্থার সাউথ কমিশনের মহাসচিব পদে বৃত হন।

১৯৭১ সালে ডঃ সিং ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন। এর অব্যবহিত পরেই ১৯৯২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। এরপর , সরকারের যে সব গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি অলংকৃত করেছেন সেগুলি হল – অর্থ মন্ত্রকের সচিব, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান।

স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ১৯৯১ – ১৯৯৬ সালে তাঁর ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসাবে পাঁচ বছরের কার্যকালের মেয়াদে। ভারতে অর্থনৈতিক সংস্কারের এক সামগ্রিক নীতির প্রচলনে তাঁর অবদান বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সাধারণ মানুষের ধারণায় ভারতের সেই বছরগুলি ডঃ সিং – এর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে।

তাঁর কর্মজীবনে ডঃ সিং বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৮৭ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণ’ প্রাপ্তি। এছাড়া, ১৯৯৫ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের জওহরলাল নেহরু জন্ম শতবার্ষিকী পুরস্কার পান। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তিনি পান অর্থমন্ত্রীদের জন্য ‘এশিয়া মানি’ পুরস্কার। ১৯৯৩ সালেই তিনি বছরের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসাবে পান ‘ইউরো মানি’ পুরস্কার। ১৯৫৬ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ সিং পান অ্যাডাম স্মীথ পুরস্কার’। ১৯৫৫ সালে পান কেমব্রিজ – এর সেন্ট জনস কলেজের রাইট্স পুরস্কার অর্থনীতিতে তাঁর অসাধারণ কাজের স্বীকৃতিতে। অন্যান্য বেশ কয়েকটি সংগঠন ও সংস্থার কাছ থেকেও ডঃ সিং সম্মান পেয়েছেন। এর মধ্যে জাপানের নিহন কেইজাই শিম্বুন সংস্থা থেকে তাঁকে সম্মান দেওয়া হয়। কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।

ডঃ সিং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৯৩ সালে সাইপ্রাসে তিনি কমনওয়েলথ রাষ্ট্র প্রধানদের বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও, ঐ বছরেই ভিয়েনায় মানবাধিকার বিষয়ে বিশ্ব সম্মেলনেও তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ড. সিং ১৯৯১ সাল থেকে সংসদের উচ্চ কক্ষ (রাজ্যসভার) – এর সদস্য ছিলেন। ১৯৯৮ – ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর ২২ মে ড. মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয়বারের জন্য তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ড. সিং এবং তাঁর পত্নী শ্রীমতী গুরশরণ কাউর – এর তিন কন্যা রয়েছে।

About the author

নরসুন্দা ডটকম